মাইগ্রেন ব্যথার কারণঃ মাইগ্রেন মাথাব্যথার সঠিক কারণ আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি তবে, বলা হয়ে থাকে যে, ব্রেনের ভিতরে রক্তবাহী নালীসমূহ কোন কারণে সংকুচিত হয়। এটা হলে মস্তিস্কে রক্ত চলাচলের তারতম্যের জন্যই এই প্রচণ্ড ধপ ধপ করে মাথাব্যথা শুরু হয়। বমি না হওয়া পর্য- এই ব্যথা কমে না। মাইগ্রেন মাথাব্যথা একবার শুরু হলে কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্য- একাধারে চলতে পারে। এমন কি, স্বাভাবিক কাজ বা পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। আমেরিকাতে কাজ থেকে ছুটি নেওয়ার সব চেয়ে বড় কারণ মাইগ্রেন।
মাইগ্রেন ব্যথা হওয়ার আগেঃ যাদের মাইগ্রেন ব্যথা আছে, তাদের অনেকগুলো পূর্বাভাস ব্যথা ওঠার আগে অনুভূত হতে পারে। টেনশন, পরীক্ষা বা চাকুরির অত্য- চাপ, মানসিক অশাি-, বাস বা গাড়ীতে অনেকক্ষণ যাত্রা করা, মহিলাদের বেশীক্ষণ গরমে রান্না ঘরে থাকা, মাসিকের সময় ইত্যাদি নানাবিধ কারণে মাইগ্রেন শুরু হতে পারে। সাধারণ মাইগ্রেন হলে সাধারণতঃ খুব বেশী মাথাব্যথা হয় না। বমি ভাব থাকতে পারে। ক্লাসিক মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে ব্যথা শুরু হওয়ার আগেই রোগী বুঝতে পারে যে, ব্যথা আসবে, কেউ কেউ চোখের সামনে আলোক বিন্দু দেখতে পান। আলো বিন্দুগুলো চোখের সামনে কাঁপতে থাকে এবং ধীরে ধীরে বড় হয়। কারো শরীরের একটা অংশ অবশ লাগতে পারে। এই ধরনের মাইগ্রেন যাদের থাকে, তাদেরপ্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে, বমি হয় এবং ব্যথা ২-৩ ঘন্টা বা তারও বেশী সময় থাকে। জটিল মাইগ্রেন যাদের হয়, তাদের মাথাব্যথার সাথে অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল উপসর্গ দেখা যায়। গুচ্ছ মাইগ্রেন সব মাথাব্যথা থেকে বেশী গুরুত্বর। প্রচণ্ড মাথা ব্যথার সাথে সাথে নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পড়া, গাল লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকে। কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন এই ব্যথা চলতে থাকে। কখনও এক বা দুই সপ্তাহ প্রচণ্ড মাথাব্যথা থাকে এবং রোগী ব্যথায় ছট ফট করেন বা ঘুম থেকে সকালে উঠেই ব্যথা শুরু হয়।
মাথা ব্যথার কারণ ও লক্ষণঃ- মাথাব্যথা এমন একটি ব্যাপার যার সঙ্গে আমরা কম-বেশী সবাই পরিচিত। সাধারণত মানসিক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, জ্বর, উচ্চরক্তচাপ বা চোখের দৃষ্টিশক্তি ত্রুটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যেই মাথাব্যথার অভিযোগ বেশী লক্ষ্য করা যায়। কোনও কোনও অধিক সচেতন ব্যক্তি মাথাব্যথা উপশমের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ক্রমান্বয়ে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধও খেয়ে থাকেন। এমনটি কখনোই যুক্তিযুক্ত নয় বরং তা স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর ক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। মাথাব্যথা যেমন সাধারণ কোনও কারণে হতে পারে, তেমনি কোনও জটিল রোগের উপসর্গ হিসেবেও মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। মাথাব্যথার কারণ ও লক্ষণঃ- মাথাব্যথা কেন হয় এর প্রকৃত কারণ এখনও অজানা। তবে মস্তিষ্কের আবরণ ডুরা ম্যাটার, পায়াম্যাটার এবং ডুরাল সাইনাস ও ফক্স সেরিব্রেরির রক্তনালিগুলো ব্যথা সৃষ্টির জন্য খুব সংবেদনশীল। যে কোনও কারণ যেমন মানসিক উত্তেজনা, মাথার মধ্যে টিউমার, রক্তচাপ, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ ইত্যাদি কারণে এগুলো বড় হলে বা স্ফীত হলে, টান পড়লে বা স্ট্রেচড হলে অথবা বেঁকে গেলে বা বেন্ড হলে এবং উত্তেজিত হলেই মাথাব্যথা হয় বলে ধারণা করা হয়। তবে মস্তিষ্কের অন্যান্য টিস্যু, সেরিব্রাল ভেন্ট্রিকেলস ও করয়েড পে¬ক্সাস ব্যথার জন্য সংবেদনশীল নয়।
চিন্তাজনিত মাথাব্যথা বা টেনশন হেডেকঃ-শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মাথাব্যথাই এ ধরনের হয়ে থাকে। বিভিন্ন রকমের মানসিক অশান্তি, অত্যধিক চিন্তা, হতাশা, অবসাদ, বিষন্নতা, কোনও কিছু প্রপ্তিতে বা সাফল্য অর্জনে ব্যর্থতা ইত্যাদি নানা কারণ এ জাতীয় ব্যথার উদ্রেক করে। এর লক্ষণগুলো হল-
১। সম্পুর্ণ মাথায় বা ঘাড়ে, কপালের দুপাশে, মাথার তালুতে চাপ দিলে ব্যথা হয় অথবা মাথাটা ভারি ভারি লাগে।
২। ব্যথা কয়েক মাস হতে কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
৩। এ ব্যথার ওপর বংশগতির কোনও প্রভাব নেই।
৪। ব্যথার সময় বমি হয় না।
৫। কোনও ওষুধে এ ব্যথার উপশম হয় না। এমন অবস্থায় রোগীকে অবশ্যই অধিক চিন্তা বা মানসিক অশান্তির কারণ খুঁজে বের করে সেটি হতে মুক্ত করতে হবে।
জ্বরে মাথাব্যথাঃ-চিন্তাজনিত মাথাব্যথার পর ভাইরাস জ্বরে মাথাব্যথাই বেশি লক্ষ্য করা যায়। আজকাল ভাইরাস জ্বরে মাথাব্যথা একটি সাধারণ উপসর্গ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস ইত্যাদি অসুখে অনেকের জ্বরের সঙ্গে তীব্র মাথাব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে।
রক্তনালী সংক্রান্ত মাথাব্যথাঃ-মাইগ্রেন, টেম্পোরাল বা ক্লাস্টার হেডেক, রক্তনালী প্রদাহজনিত মাথাব্যথাই এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। তবে এদের মধ্যে মাইগ্রেনই বেশী লক্ষ্য করা যায়। মাথাব্যথা হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পরিলক্ষিত হয়।
১। তীব্র মাথাব্যথা যা কি-না খোঁচা দিচ্ছে বা আঘাত করছে এমন মনে হয়।
২। সাধারণত মাথার যে কোনও একদিকে, অল্প সময়ের জন্য এবং কিছুদিন পরপর অনুভূত হয়।
৩। মাথাব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব ও বমি হয়।
৪। এ ব্যথা সাধারণত বংশগত হয়।
৫। অনেকক্ষণ ধরে টিভি দেখা, বেশি ভ্রমণ করা, ঠাণ্ডা বা গরম কিছু খাওয়া, অত্যধিক সূর্যশ্মি বা অত্যধিক ঠাণ্ডা ইত্যাদির মাধ্যমে মাথাব্যথার সূত্রপাত হতে পারে।
৬। আবার নীরব অন্ধকার ঘরে বিশ্রাম নিলে, বমি করলে, ব্যথাজাতীয় ওষুধ খেলে এ ব্যথার উপশম হতে পারে।
প্রথমে.....